Rwandan Genocide - রুয়ান্ডা গণহত্যা








 হুটু আর টুটসি নামের দুই সম্প্রদায় আগের থেকেই জাতিগত দ্বন্দ্বে লিপ্ত ছিল। ধারনা করা হয় টুটসিদের আদি বাসস্থান ইথিওপিয়াতে। দু সম্প্রদায় ই একই ভাষায় কথা বলত এবং চালচলন ও ছিল একই। কিন্ত টুটসিদের দেহের গঠন হুটু থেকে একটু লম্বাকৃতির ছিল। সংখ্যাগুরু হুটুরা আগের থেকেই সংখ্যালঘু টুটসিদের থেকে পিছিয়ে ছিল প্রশাসনিক ও অন্যান্য কাজকর্মে।

১৯১৬ সালে বেলজিয়াম যখন আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডাকে দখল করে নেয় তখন তারা নাগরিকদেরকে সম্প্রদায়ের উপর ভিত্তি করে দু’রকম পরিচয়পত্র দেওয়ার নিয়ম প্রচলন করে।এতে এই দু সম্প্রদায়ের ভেদাভেদ আরো তীব্র হয়। টুটসিরা বেলজিয়ানদের ক্ষমতা থাকাকালে অনেক সুবিধা পায়। এই ভেদাভেদের প্রথম ফল পাওয়া যায় ১৯৫৯ সালে যখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গাতে প্রায় ২০ হাজার মানুষ মারা যায়। অতঃপর ১৯৬২ সালে বেলজিয়ানরা ক্ষমতাচ্যুত হলে হুতুরা আগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা ফিরে পায় এবং ১৯৭৩ সালে হুতু সম্প্রদায়ের নেতা জুভেনাল হাবিয়ারিমানা রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহন করেন। তার ক্ষমতাকালে দেশের অর্থনীতি ধ্বসে পড়ে। ক্রমেই সাধারন মানুষের কাছে জনপ্রিয়তা হারাতে শুরু করেন জুভেনাল। এর সুযোগে ১৯৫৯ সালের দাঙ্গায় উগান্ডা এবং পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে পালিয়ে যাওয়া টুটসিরা রুয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্ট (RPF) নামে একটি সশস্ত্র বিদ্রোহী দল গঠন করে। এর নেতৃত্বে ছিল টুটসি নেতা কাগমা। এই দলের সাথে যোগ দিয়েছিল কিছু মডারেট হুতুরাও। দলটির লক্ষ্য ছিল প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে পালিয়ে যাওয়া টুটসিদের দেশে ফিরে আনা। কিন্ত জুভেনাল তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে হুতু নেতাদের সাথে মেলবন্ধন করেন এবং তাদেরকে বলেন রুয়ান্ডার টুটসিরা RPF কে সহযোগিতা করছে। তার লক্ষ্য ছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা দিয়ে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা। উল্লেখ্য ১৯৯৩ সালে সরকার আর RPF এর সাথে এক শান্তি চুক্তি হয়েছিল কিন্ত তা বাস্তবায়ন হয় নি।
১৯৯৪ সালের ৬ এপ্রিল জুভেনালের বিমানকে রকেট হামলা করে ভূপাতিত করা হয়। বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট এবং ফ্রান্সের একজন নাগরিক ও উক্ত বিমানে ছিলেন।
প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে হুটু সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করে RPF ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এর ই ফলস্বরূপ প্রেসিডেন্টের অনুগত সেনাবাহিনী এবং হুটু সম্প্রদায়ের বাহিনীগুলো চালায় ধ্বংসলীলা। রেডিওর মাধ্যমে নির্দেশ দেওয়া হয় টুটসিদের হত্যা করতে। এতে করে অনেক সাধারন মানুষ ও এই হত্যায় অংশগ্রহণ করে। মাত্র ১০০ দিনে হত্যা করা হয় প্রায় ৮ লাখ মানুষকে!
ইতিহাসের অন্যতম পাইকারি হত্যা হলেও মিডিয়ার কাছে তেমন গুরুত্ব পায় নি এই রুয়ান্ডার গনহত্যা ।ফ্রান্সের নাগরিক উক্ত বিমানে থাকার কারনে ফ্রান্স তাদের তদন্তে কাগমাকে দায়ী করেন বিমান ভূপাতিত করার জন্য। গত ১৬ মে তাকে ২৬ বছর পর গ্রেপ্তার করা হয়।
যদিও জুভেনাল হত্যার বিচার এখনো হয় নি।

Post a Comment

0 Comments