মানুষ সত্য ভালোবাসে। কিন্ত পৃথিবীতে এমন কোনো ব্যক্তি আছে কি যে কিনা যেকোন পরিস্থিতিতে সত্য বলে এবং সে সত্যের উপর অটুট থাকে? সাধারনত সবসময় একদম সত্য তুলে এরকম মানুষ আছে কিনা তা নিয়ে আপনি সন্দেহ প্রকাশ করতেই পারেন। কিন্ত দার্শনিক এরিস্টটল মনে করতেন পৃথিবীতে এরকম মানুষের অস্তিত্ব রয়েছে। তার এই বিশ্বাসের জন্য ‘virtue’ শব্দটি ব্যবহার করেন। আস্তে আস্তে সেটি Ethics এর সাথে মিলে যায় এবং এই এথিক্স দ্বারা আমরা কোন কিছুর ভালো খারাপ নির্ধারন শুরু করি।
যেহেতু আমরা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই ভালো খারাপ দেখে থাকি,সেহেতু যুগের বিবর্তনে নানা পেশা বা প্রতিষ্ঠানেও সেই ভালো খারাপের চর্চা শুরু হয়।সেই ভালো খারাপের দিক মিডিয়াতেও দেখা হয়। যাদেরকে মিডিয়ার ভাষায় ‘Code Of Ethics’ বলা হয়। এখানে মিডিয়া বলতে মেইনস্ট্রিম বা প্রিন্ট মিডিয়াকে বুঝিয়েছি।
প্রশ্ন হতে পারে কেন মিডিয়া এথিক্স প্রয়োজন?
উত্তরটা আমরা সবাই জানি যে যেহেতু মিডিয়াকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ বলা হয়,সেহেতু সমাজে এর ভূমিকা অনেক সংবেদনশীল। মিডিয়াকে মূলত অবহেলিত মানুষের মতামত তুলে ধরার মাধ্যম বলা হয় কিন্ত আসলে কি তাই?
না!
এটা বর্তমানে বিশ্বের প্রত্যেক ব্যক্তিই জানেন। এই উত্তরটি বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই দিবেন। কিন্ত যদি বলা হয় যে মিডিয়ার গোড়াপত্তন থেকেই মিডিয়া কখনো মানুষের প্রতিনিধিত্ব করে নাই?
মিডিয়া আমাদের চিন্তা বা মত প্রকাশের মাধ্যম নয়,বরং আমরা কি চিন্তা করবো সেটি নির্ধারন করে দেয়ার মাধ্যম!
যার উদাহরন হিসেবে বলা যায় ১৯৬২ সালের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এক গবেষনায় জনগণকে জিজ্ঞেস করা হয় তারা কি চিন্তা করছে?উত্তরে তারা সবাই ক্রাইম,দুর্নীতি ইত্যাদির কথা বলে ।যা কিনা সেই সময় অহরহ না ঘটলেও পত্রিকায় বা সংবাদে প্রকাশ করা হচ্ছিল।
বর্তমান দুনিয়ায় এমন অবস্থা যে ত যার যার চিন্তাধারা প্রকাশের জন্য নিজস্ব একটি মিডিয়া দরকার। যা আমরা প্রভাবশালীদের নিউজ চ্যানেল বা পত্রিকা দেখেই বুঝতে পারছি।
১৯৫৭ সালে দিল্লিতে একটি গবেষনায় দেখা যায় সম্পুর্ণ দিল্লিতে একজন সংবাদ দাতা নেই যে কিনা নিজ ইচ্ছায় সরাসরি সংবাদ প্রকাশ করতে পারে!
এরই ফলশ্রুতিতে আজকাল ‘Paid News’, ‘Media Trial”,Sting Operation ,Breaking News এর মত নানা কান্ড দেখতে পাই। আর Yellow Journalism এর কথা না ই বললাম!
৮০শতাংশ মিডিয়া কর্মীরা মনে করেন যে গুরুত্বপূর্ণ খবরের চেয়ে ওইসব খবর প্রকাশ করা উচিত যেগুলো দর্শকদের আকৃষ্ট করবে ।
এরজন্য বোধ হয় ক্রাইস্টচার্চের হামলাকারীর কিলিং ভিডিও মিডিয়ার পেশাদার কর্মীরা অপেশাদার সাইট থেকে নিয়ে কোন চিন্তা ভাবনা না করেই ফলাও করে প্রকাশ করে দেন।
যাই হোক আমরা যত মিডিয়ার এথিক্স নিয়ে আলোচনা করি না কেন, মিডিয়া যে ৪র্থ স্তম্ভ হিসেবে প্রকাশ পেলেও তা কখনোই অবহেলিত মানুষের মাধ্যম হিসেবে প্রকাশ হতে পারে নি। এরিস্টটলের সেই ‘Virtue’র যথারীতি ব্যবহার না হলে ভবিষ্যতেও পারবে কিনা সন্দেহ থেকেই যায়।
0 Comments