ছোট বেলা থেকে মহাকাশ জয় করার গল্প আমরা কতই না শুনেছি! এই মহাকাশের অন্যতম গ্রহ মঙ্গলগ্রহ ,যেটাকে জয় করার জন্য কিছু স্বপ্নপিপাসু মানুষ অবিরাম গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা "নাসা" গত ফেব্রুয়ারীতে তাদের পার্সিভিয়ারেন্স নামক রোবটকে এই লাল গ্রহে অবতরণ করাতে সক্ষম হয়। এই ছয় চাকাবিশিষ্ট রোবটের কাজ হলো মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কিনা বা মঙ্গলকে বসবাসযোগ্য করা জন্য উপাদান আছে কিনা তা বের করা। এই রোবটের সাথে একটি ছোট টোস্টারের (Toaster) সাইজের ডিভাইস লাগানো হয় যেটা দ্বারা মঙ্গলের মতো একটি গ্রহে অক্সিজেন তৈরী করতে সক্ষম হয়েছে নাসা। বলে রাখা ভালো মঙ্গলের বায়ুমন্ডল এতই অঘণীভূত যে এটি পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মাত্র ১ শতাংশ!
মঙ্গলের বায়ুমন্ডলের ৯৫ শতাংশ হচ্ছে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং বাকি ৫ শতাংশ হচ্ছে নাইট্রোজেন ও আর্গন। পার্সিভিয়ারেন্সের সাথে লাগানো মক্সি নামক এই ডিভাইসটি সেই ৯৫ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইডকে ব্যবহার করে শ্বাসযোগ্য অক্সিজেনে রুপান্তর করতে সক্ষম হয়েছে।
মক্সি কি ও কিভাবে কাজ করে?
আমরা আগেই জেনেছি যে মক্সি (MOXIE) হলো একটি ছোট ডিভাইস যা মঙ্গলে পাঠানো পার্সিভিয়ারেন্স নামক রোবটের সাথে সংযুক্ত। এই ডিভাইস প্রতিঘন্টায় ১০ গ্রাম অক্সিজেন তৈরি করতে সক্ষম। কিন্ত প্রথম পরীক্ষায় এটা দ্বারা ৫ গ্রাম অক্সিজেন তৈরি করা হয়েছে যার মাধ্যমে একজন মহাকাশচারী ১০ মিনিট শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারবেন।
এই "মক্সি" ইলেক্ট্রোলাইসিস প্রক্রিয়ায় অক্সিজেন উৎপাদন করে। সহজভাবে বলতে গেলে এটি প্রচন্ড তাপের মাধ্যমে মঙ্গলের কার্বনডাই অক্সাইড থেকে অক্সিজেন পরমাণু কে আলাদা করে। কাজটি খুব সহজ মনে হলেও লাল গ্রহের প্রেক্ষাপটে এটা খুবই অবিশ্বাস্য ,কেননা এর বায়ুমন্ডল খুবই অঘণীভূত।
কেন এই অক্সিজেন এতটা গুরুত্বপূর্ন?
নাসা আগামীতে মঙ্গলে মহাকাশচারী পাঠাতে চায়। তারা বলছে যদি সেখানে মহাকাশচারী পাঠানো হয় এবং তাদেরকে ফেরত আসতে হয় তাহলে তাদের ৭ মেট্রিক টন রকেট জ্বালানী এবং ২৫ মেট্রিক টন অক্সিজেন লাগবে। যা পৃথিবী থেকে বহন করে নেওয়া খুবই কঠিন একটি কাজ।তাই নাসার লক্ষ্য মঙ্গলে ১ মেট্রিক টন অক্সিজেন উৎপাদনক্ষম একটি মেশিন পাঠানো যা একজন মানুষ একবছর ব্যবহার করতে পারবে।
তাই বলা যায় এই অক্সিজেনের গুরুত্ব দুটি দিকে
- মহাকাশচারীর শ্বাস প্রশ্বাসে ব্যবহার করা এবং
- রকেটের জন্য জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা।
উল্লেখ্য নাসা আগামী দু'বছর আরো নয় থেকে দশবার মক্সির মাধ্যমে এই অক্সিজেন উৎপাদনের পরীক্ষা চালিয়ে শতভাগ নিশ্চিত হতে চায়। এর থেকে আমরা এটাই বলতে পারি যে , আমরা যেই গল্প শুনতাম তা আজ আর গল্প নয়, বাস্তব!
হয়তো এভাবেই ভবিষ্য়তে আমাদের আর সায়েন্স ফিকশানের বই পড়তে বা মুভি দেখতে হবে না,যা দেখবো এবং পড়বো তা হবে সায়েন্স ফ্যাক্টস।
0 Comments