প্যারিস চুক্তির ! কি কেন কিভাবে?





আমরা প্রতিনিয়তই বলে থাকি যে প্রকৃতি তার আপন নিয়মে চলে। কিন্ত আসলেই কি তাই? গত দুইশত বছরের প্রকৃতির অবস্থা বিবেচনা করলে দেখা যায় "মানুষ" নামক এক প্রজাতি প্রকৃতির সেই মিলিয়ন বছর ধরে চলে আসা নিয়মে হস্তক্ষেপ করেছে। এই হস্তক্ষেপের পর থেকে কিন্ত পৃথিবীতে আমরা সবাই কোন না কোনভাবে অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করেছি। কিন্ত এই উন্নতিকে কি আসলেই উন্নতি বলা যায়? উন্নতির ও একটা সীমা থাকা দরকার। কিন্ত মানুষ নামক সেই প্রজাতি সীমা অতিক্রম করে প্রকৃতিকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। ১৮ শতকে শিল্পবিপ্লবের পূর্বে প্রকৃতি যেই চিরচেনা ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছিল, তা আর দেখা যায় না। ধারাবাহিকতার বাইরে গিয়ে অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা ইত্যাদি ঘটিয়ে প্রকৃতি আজ আমাদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছে।আসলে এটাকে প্রতিশোধ না বলে আত্নহত্যা ও বলা যেতে পারে। কেননা আমরা আজ ও প্রকৃতিকে নষ্ট করে যাচ্ছি। গত ১৩৬ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ১৭ টি উষ্ণতম বছরের মধ্যে ১৬ টি ই ২০০১ সালের পরে ঘটেছে। এই অবস্থা বিবেচনা করে অনেক চুক্তি হলেও ২০১৬ সালে হওয়া প্যারিস জলবায়ু চুক্তি অন্যতম।

প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ঃ

  • পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস রাখা - জিনিসটা সহজ মনে হলেও আসলে তা নয়। বর্তমানে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ০.৯৯ ডিগ্রী বা ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস পরিবর্তন হয়েছে। এখন ভেবে দেখুন যদি মাত্র ১ ডিগ্রীর জন্য প্রকৃতিতে এতো খারাপ প্রভাব পড়ে তাহলে এর বেশি নিশ্চই মারাত্নক অবস্থার সৃষ্টি হবে!মূলত বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন যদি আমরা এটি নিয়ন্ত্রণে না আনি তাহলে  ৫ ডিগ্রী হতেও সময় নিবে না। এরজন্য প্যারিস চুক্তিতে বলা হয়েছে সম্ভব হলে ১.৫ ডিগ্রী এর নিচে গড় তাপমাত্রা রাখার চেষ্টা করা হবে।





  • জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করা - প্যারিস জলবায়ু চুক্তির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই চুক্তির আওতায় ধনী দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে প্রতি বছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা করবে। এই সহায়তার কারণ হলো উক্ত দেশগুলির কারণেই মূলত জলবায়ুর এত পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। দেখা যায়, পৃথিবীর মোট কার্বন নিঃসরণের ৩০ শতাংশ চীন, ১৫ শতাংশ আমেরিকা ,১০ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ৭ শতাংশ ভারতের মত দেশ গুলো করে থাকে। অর্থাৎ কার্বন নিঃসরণের সিংহভাগই উন্নত দেশগুলো করে আসছে। 



  • টার্গেট ২০/২০/২০ - এর মাধ্যমে ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ ২০ শতাংশ কমিয়ে আনার পাশাপাশি নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার ২০ শতাংশ বাড়ানো এবং এনার্জি এফিসিয়েন্সি ২০ শতাংশ বানানোর লক্ষ্য করা হয়েছে।
 উল্লেখ্য এই চুক্তির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ২০৫০ থেকে ২১০০ সাল নাগাদ কার্বন নিঃসরণকে ০% এ নামিয়ে আনা। অর্থাৎ প্রকৃতি যতটুকু কার্বন স্বাভাবিকভাবে শোষণ করতে পারবে ঠিক ততটুকুই ব্যয় করা হবে।


কিভাবে কাজ করবে?

এই চুক্তির আওতায় দেশগুলোকে প্রথমে তাদের অভ্যন্তরীণ আইন পাশ করাতে হবে। এরপর জাতিসংঘের কাছে এসে তারা নিজেদের ইচ্ছামত  কার্বন নিঃসরণের একটি টার্গেট জানিয়ে দিবে। পাঁচ বছর পর পর জাতিসংঘ তাদের অবদান মনিটরিং করবে। অভ্যন্তরীন আইন পাশ করার জন্য যেই টার্গেট করা হবে তাকে National Determind Contribuition (NDC) বলা হয়। যেমন আমেরিকা তার কার্বন দূষণ ২০৩০ সাল নাগাদ ২৮% কমিয়ে আনার টার্গেট করেছে ।

বিশ্বের বেশিরভাগ চুক্তি 'Top Down" পদ্ধতিতে কাজ করে কিন্ত এই  চুক্তির বিশেষত্ব হলো এটি "Bottom Up" পদ্ধতিতে কাজ করে। অর্থাৎ ছোট সমস্যা সমাধান করে বড় সমস্যা সমাধানে এগিয়ে যাওয়া।


উল্লেখ্য এই চুক্তি থেকে যে কেউ বের হতে বা যুক্ত হতে পারে। কিন্ত বের হওয়ার তিন বছর আগে ঘোষণা দিতে হয়, যেমনটা আমেরিকা করেছিল । কিন্ত সম্প্রতি আমেরিকা আবার এই চুক্তিতে যুক্ত হয়েছে যা পরিবেশবাদী বা পৃথিবীর জন্য খুবই ভালো সংবাদ।
এই চুক্তিতে কোন দেশ কি পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ করবে সেই সম্পর্কে আন্তর্জাতিক কোন আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। অনেকে এটাকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যতম সমস্যা বলে বিবেচনা করেন।
কিন্ত অন্যদিক থেকে যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে যে প্রকৃতিকে বাঁচানো আমাদের  একটি নীতিগত দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই হয়তো আমেরিকার মতো একটি দেশ আবার এই চুক্তিতে যুক্ত হয়েছে,যার মাধ্যমে পৃথিবীকে বাঁচানোর এক প্রবল ইচ্ছার এক বার্তা দেয়।বর্তমানে আমাদের সবচেয়ে বড় হুমকি হলো জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি। এই হুমকি থেকে রক্ষা পেতে ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় পৃথিবী গড়ে তুলতে তরুণদের কে নিজ নিজ জায়গা থেকে এগিয়ে আসতে হবে।








Post a Comment

0 Comments