বার্লিন দুর্গের পতন

 


১৯৬১ সাল থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৮ বছর পশ্চিম বার্লিন থেকে পূর্ব বার্লিন এবং পূর্ব জার্মানির অন্যান্য অংশ পৃথক ছিলো।
২য় বিশ্বযদ্ধের পরিসমাপ্তির পর জার্মানি মূলত ৪টি অংশে ভাগ হয়েছিলো। এই ৪ অংশের শাসনভার ছিল ৪ মিত্র পরাশক্তি -যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়ন এর উপর।
বার্লিন সোভিয়েত ইউনিয়ন এর অন্তর্ভুক্ত হলেও এটিকেও ৪ অংশে ভাগ করা হয়। দখলদার রাষ্ট্রগুলোর উদ্দেশ্য জার্মান শাসন হলেও শীতল যুদ্ধ (cold war) শুরুর প্রেক্ষাপটে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে গঠিত হয় -Federal Republic of Germany (পশ্চিম জার্মানি)
এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন অংশটি গঠন করে Democratic republic of Germany (পূর্ব জার্মানি)। সামাজিক বাজার ব্যবস্থায় পশ্চিম জার্মানি একটি পুঁজিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত হয়।
অন্যদিকে পূর্ব জার্মানিতে ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজ তান্ত্রিক অর্থনীতি। এর ফলে দেশটি সোভিয়েত ব্লকের অন্যান্য দেশের তুলনায় সম্পদশালী হয়ে উঠলেও পশ্চিম জার্মানি থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলো
এতে করে অনেক পুর্ব জার্মান নাগরিক আকৃষ্ট হয়ে পশ্চিমাংশে চলে যেতে শুরু করে
বিপুল পরিমাণ অভিবাসন ঠেকাতে পূর্ব জার্মানি সিদ্ধান্ত নেয় বার্লিনের পশ্চিম ও পূর্বাংশের মধ্যে একটি দেওয়াল তৈরী করা হবে.
এই দেওয়ালে ২ স্তরের পাহাড়া দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়
একটি স্তর পূর্ব জার্মান সীমান্ত প্রহরী আর দ্বিতীয় স্তরে থাকবে সোভিয়েত সেনা।
পূর্ব জার্মান প্রধানমন্ত্রী ওয়াল্টার উলবিকট জলদি পদক্ষেপ নেন। পরে সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী এটি অনুমোদন করেন।
উক্ত দেওয়াল এলাকায় ১০০ গজের একটি 'নো ম্যানস ল্যান্ড" এরিয়া ছিলো যাকে মৃত্যু ফাদ হিসেবে বলা হতো।
অভিবাসন ঠেকাতে এখানে নুড়ি পাথর দিয়ে তৈরি অনেক স্বয়ংক্রিয় ফাদ ছিলো। এছাড়া দেওয়ালটি ৪ অংশে বিভক্ত ছিলো। যার মধ্যে চতুর্থ দেয়ালাটি ছিল সবচেয়ে মজবুত।১২ ফুট লম্বা ৪৫ হাজার পৃথক ক্রংক্রিটের স্ল্যাপ ছিলো এটিতে। ১১৬ টি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার ও ২০ টি বাংকার থেকে সত্ত্বেও প্রায় ৫০০০ বার এই দেয়াল টপকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এতে করে প্রান ও গেছে শতজনের।
২৩ আগস্ট ১৯৮৯ সালে "হাংেরী" অস্ট্রিয়া এর সাথে সীমান্ত কড়াকড়ি প্রত্যাহার করলে সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ১৩ হাজার পূর্ব জার্মান হাংেরী হয়ে পশ্চিম জার্মানে ঢুকে।
অক্টোবর মাসের শুরুতেই পূর্ব জার্মানিতে বিক্ষোভ শুরু হলে ১৮ অক্টোবর এরিক হেনকার দীর্ঘশাসন পদ থেকে পদত্যাগ করেন। আন্দোলনের প্রথম দিকের স্লোগান ছিল " আমরা বাইরে যেতে চাই"। পরবর্তীতে সেই স্লোগান টি রুপ নেয় দুই জার্মানির ঐক্যে । তখন স্লোগান হয় "আমরা এখানেই থাকবো"।
৪ নভেম্বর ১৯৮৯ সালে পূর্ব বার্লিনের "আলেক্সান্ডার প্ল্যাটজে" ১০ লাখ বিক্ষোভকারী সমবেত হন। ৯ নভেম্বর টেলিভিশন এ দুই জার্মানি এক হওয়ার কথা শুনে বিক্ষোভকারীরা বার্লিন প্রাচীরের দিকে যেয়ে তাদের মধ্যে যেই দূরত্ব তার সমাপ্তি ঘটাতে যান। নিরাপত্তায় নিয়োজিতরা খবর টি না জানার ফলে হতভম্ব হয়ে যান। অত:পর ক্ষমতা প্রদর্শনের কোনো আদেশ না পেয়ে গেট খুলে দেন আর এভাবেই ৯ ই নভেম্বর ১৯৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীরের অনানুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে!

Post a Comment

0 Comments